শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
মোঃ আল-আমিন
২০০১ সালে বগুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। অভাব থাকলেও কিছুটা সুখেরই ছিল আমার শৈশব। বাবা-মার সব খুশি, আনন্দ সবই যেন ছিল আমি কেন্দ্রিক। কিন্তু সেইদিনগুলো খুব দীর্ঘ ছিল না। তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। শুনতে পাই বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। ব্যাস, বাবার বিয়ের সাথে সাথে আমার সুখগুলো যেন বিচ্ছেদ করে হারিয়ে গেল দূর অজানায়। বাবা সৎমাকে নিয়ে থাকতেন ঢাকায়, আমি আর মা থাকতাম বাড়িতে। কিন্তু এভাবে আর খুব বেশিদিন থাকার নসীব হলো না। পঞ্চম শ্রেণিতে বাবা মাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলেন। ১১ বছর বয়সে মাকে হারালাম। বাবার স্নেহও পেলাম না খুব বেশিদিন। আমি ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবাও সৎমাকে নিয়ে চলে এলেন ঢাকায়। আমায় রেখে আসলেন সৎ নানীর বাড়ি। সেখানেই থাকলাম বছর দুয়েক। কিছু কারণে সেখানে থাকা আর হয়ে উঠলো না। নবম শ্রেণিতে গিয়ে উঠলাম চাচার বাসায়। এর মধ্যে বাবা + কিছু শুভাকাঙ্খী মরিয়া হয়ে উঠলেন আমায় গার্মেন্টসে কাজ করানোর জন্য। পড়ালেখা ছেড়ে এসেও পড়েছিলাম ঢাকায়। কিন্তু ভুলটা ভাঙলো দ্রুতই। আবার ফিরে গেলাম বাড়ি। সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলাম। তারপর বাবা আর কিছুতেই পড়াশোনা করাতে দিবেন না। তিনি চাইতেন আমি যেন ঢাকায় এসে রিকশা চালিয়ে হলেও উপার্জন করি। (যদিও এখন তার ভুলগুলো বুঝতে পারেন)। এসএসসির রেজাল্ট দেওয়ার তখনো ৩ মাস বাকি। বাড়িতে থাকলাম না আর। ৩ মাস কোথাও কাটানোর ইচ্ছায় বেড়িয়ে পড়লাম কাজের উদ্দেশ্যে। কাজ করলাম নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এরই মধ্যে ফলাফল দেওয়ারও সময় হয়ে এলে বাড়িতে চলে আসলাম।
ফলাফল প্রকাশের পর আবারও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমাদের মাদ্রাসায় আবাসিক ব্যবস্থা ছিল যা আমায় কিছুটা স্বস্তি দিল। দেরি না করে চলে আসলাম মাদ্রাসায়। অধ্যক্ষ স্যারকে বললাম সবকিছু, যাতে আমায় আবাসিকে ফ্রী থাকা-খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। তিনি প্রথমে হোস্টেলে ফ্রী রাখতে রাজি হলেন না। চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলাম অফিস রুম থেকে। বাহিরে এক ওস্তাদজী আমার সব শুনে হাত ধরে অফিসে নিয়ে গেলেন। প্রিন্সিপাল স্যারকে বললেন আমার সমস্ত খরচ চালাবেন উনিই। এভাবে হুজুরদের সহায়তায় এইচএসসির দুই বছরের বন্দোবস্ত হয়ে গেলেও চিন্তায় পড়লাম হাত খরচ + বই খাতার টাকার। কালবিলম্ব না করে দু’জন ছাত্রকে পড়াতে লাগলাম। এভাবেই হুজুরদের সহায়তায় শেষ হলো এইচএসসি জীবন। আলহামদুলিল্লাহ এইচএসসিতে মাদ্রাসায় প্রথম হলাম। তারপর আর কোথাও খাকার জায়গা না থাকায় চলে আসলাম ঢাকায়। এডমিশন কী! বুঝতাম না তখনো। বিক্রি করে দিয়েছিলাম বাংলা প্রথম পত্র বই। কিন্তু ভুল ভাঙে দ্রুতই। বড় আপুর দেওয়া কিছু শীট দিয়েই যাত্রা শুরু করলাম। দরিদ্রতার কারণে কিনতে পারিনি একটি বইও, কোচিং তো ছিল বিলাসিতা। আবেদন + কেন্দ্রে যাতায়াতের সমস্ত খরচ বহন করেছেন এক শুভাকাঙ্ক্ষী। যার নাম ব্যতীত কিছুই জানিনা আমি। আরো অবাক করা বিষয় হলো, আমার ভর্তির খরচ যোগাতে চাঁদা তুলেছেন বেশ কয়েকজন মানুষ, যাদের অনেককে চিনিও না আমি। সবই আল্লাহর মেহেরবানি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে চান্স পেলাম।
(আলহামদুলিল্লাহ)
মোঃ আল-আমিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (খ ইউনিট)
মেরিট পজিশন: ৬১০
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
Leave a Reply