শনিবার, ২১ মে ২০২২, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৩৪ কোটি টাকার স্ক্র্যাপের আড়ালে প্রায় দ্বিগুন স্ক্র্যাপ ভাগিয়ে নিচ্ছেন রেলের সম্রাট শাহ আলম সিণ্ডিকেট।ওপেন টেন্ডার হলেও সিণ্ডিকেটের বাইরে কেউ বিট করতে পারেনি। ওজন, লট ও সংখ্যায় কম দেখিয়ে টেন্ডারের দ্বিগুন স্ক্র্যাপ নিয়ে যাচ্ছে তারা। অথচ গত ২৪ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় বৈঠকে রেলওয়ের স্ক্র্যাপ পরিমাপের ক্ষেত্রে স্কেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে স্থায়ী কমিটি। এ জন্য পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার সুইপার থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে গেছে ঘুষের টাকা।
সবঘাট ম্যানেজ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাড়তি স্ক্র্যাপ। তারা ইচ্ছে মতো গাড়ি ভেঙ্গে স্ক্র্যাপ করে ওজন না দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কারখানায় দুইজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকলেও তারা এসব দেখছেন না। তাদের কোনো প্রতিনিধিও সেখানে থাকে না। স্ক্র্যাপ বিক্রির নামে রেলের পাহাড়তলী কারখানায় হরিলুঠ হচ্ছে।
এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলছে না। এক কর্মকর্তা আরেক কর্মকর্তার দিকে আঙ্গুল তুলছে। রেলওয়ে পাহাড়তলী কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক (নির্মাণ) রাশেদ লতিফের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি বলেন, কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) তাপস কুমার দাশের সঙ্গে কথা বলতে। তাপস কুমার দাশকে মুঠোফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মচারি বলেন, শাহ আলম সিণ্ডিকেট রেলের স্ক্র্যাপ কিনেছে। তাদের বাইরে কেউ টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি। তাদের মনোনিত কয়েকজন টেন্ডার করেছে। তারা শাহ আলমের কাছে বিক্রি করে চলে গেছেন। রেলের এসব স্ক্র্যাপ তারা বিএসআরএমের কাছে বিক্রি করেছেন। টেন্ডারে যে পরিমান স্ক্র্যাপ বিক্রি হয়েছে, তার দ্বিগুন স্ক্র্যাপ নিয়ে যাচ্ছে তারা। এখানে কারখানার ছোট-বড় সব কর্মকর্তা-কর্মচারি ম্যানেজ। যার ফলে ৩৪ কোটি টাকার স্ক্র্যাপের আড়ালে ৬৮ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ নিয়ে যাবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিবার স্ক্র্যাপের টেন্ডারে এমনটাই দেখে আসছি। এটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে, নতুন কোনো বিষয় নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (সিএমই) বোরহান উদ্দিন সকালের চট্টগ্রামকে বলেন,স্ক্র্যাপ বিক্রিতে কোনো প্রকার অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিওএস) ফরিদ আহমেদ সকালের চট্টগ্রামকে বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৩০ থেকে ৩৫টি টেন্ডারের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়েছে। কতটন স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ৩০ ধরণের স্ক্র্যাপের মধ্যে কিছু স্ক্র্যাপ ওজনে, কিছু স্ক্র্যাপ সংখ্যায় ও কিছু স্ক্র্যাপ লটে বিক্রি করা হয়েছে।
শাহ আলমের এসএ করপোরেশন কয়টি টেন্ডার পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৫ থেকে ৭টি টেন্ডার। এ বিষয়ে জানতে শাহ আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নি।
প্রসঙ্গত,গত ২৪ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় বৈঠকের বৈঠকে জানানো হয়। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৭ হাজার ৬৪৮ টন স্ক্র্যাপ মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৬৫ টন স্ক্র্যাপ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ৫ হাজার ৬৮৩ টন বিক্রির দরপত্র আহ্বানের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ৩৮৭টি খালি ড্রাম বিক্রির ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৪ টাকা জমা দানের অপেক্ষায় আছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রি করে পূর্বাঞ্চল ৩৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং পশ্চিমাঞ্চল ১২ কোটি ২৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
Leave a Reply