রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২, ১১:৫৬ অপরাহ্ন
উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকার পরও ১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিতে থাকা অশীতিপর রাবেয়া খাতুনের মামলার কার্যক্রম চালানোর কারণে হাইকোর্টের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এক বিচারক। তলব আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাজির হয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. আল মামুন এ দুঃখ প্রকাশ করেন।
পরে হাইকোর্ট তাকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে আগামী ১৭ জুলাই দিন ধার্য করেন এবং এই মামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী জুলহাস জীবিত না মৃত এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
বুধবার (৩ জুলাই) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে বিচারক মো. আল মামুনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি আটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল।
শুনানিতে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘নিম্ন আদালতের প্র্যাকটিস পেশকার আদেশ লিখে দেন, বিচারক স্বাক্ষর করেন। আমরা পেশকারকে শোকজ করবো। তারপর এ বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানাতে পারবো।’
তখন বিচারককে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আপনারা বিচার বিভাগের অংশ। আপনাদের সুনাম হলে বিচার বিভাগের সুনাম হয়। আবার দুর্নাম হলে বিচার বিভাগের দুর্নাম হয়।’
এ পর্যায়ে বিচারক মো. আল মামুনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন আদালত।
এর আগের আদেশে মামলার বিচারক মো. আল মামুনকে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার পাশাপাশি মামলার সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাহাবুদ্দিন মিয়াকে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে এ মামলার অন্যতম আসামি জুলহাস মিয়ার মৃত্যু হয়েছে কিনা তাও হাইকোর্টকে জানাতে বলা হয়। একইদিনে মামলার আরেক আসামি অশীতিপর রাবেয়ার বয়স প্রমাণে তার জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এ নির্দেশ অনুযায়ী আজ মামলার সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাহাবুদ্দিন মিয়া আদালতে হাজির হয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন এবং মামলাটির তথ্য আদালতকে জানান। একইসঙ্গে জুলহাস মিয়ার ব্যাপারে সময় চাওয়া হলে আগামী ১৭ জুলাই ধার্য তারিখে জুলহাস জীবিত না মৃত এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে, অশীতিপর বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অশীতিপর রাবেয়া: আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বৃদ্ধার বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেই। মামলা শেষ হয় না। কবে শেষ হবে, তাও জানি না। পুলিশরে শরবত, মোরাব্বা বানাই খাওয়াছি। তারপরেও মামলায় আমারে আসামি বানাইছে। আমি আর বাঁচতে চাই না। মরতে চাই। অনেকদিন ধরে এই মামলায় হাজিরা দেই। আদালত আমাকে মামলা থেকে খালাসও দেয় না, শাস্তিও দেয় না।’
পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে তেজগাঁও থানার এসআই আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে অশীতিপর রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন ২০০২ সালের ২ জুন। মামলা নম্বর ১৯৩৮/০২। এরপর তিনি গ্রেফতার হন, ছয় মাস কারাগারে থেকে জামিনও পান। পরে তাকেসহ দুই আসামি জুলহাস ও মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ শুরু হয় মামলার বিচার।
‘তেজগাঁও থানা এলাকার ৩/ক গার্ডেন রোড, কাজী আবদুল জাহিদের ঘরের দক্ষিণ পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয় রাবেয়া খাতুনকে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ। সেই মামলা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকার আদালতের বারান্দায় ১৮ বছর ধরে ঘুরছেন এই অশীতিপর মানুষটি।’
পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত বিচারিক আদালতে থাকা মামলার কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি স্থগিত না রাখায় সংশ্লিষ্ট বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
Leave a Reply