রবিবার, ০৩ জুলাই ২০২২, ১১:১২ অপরাহ্ন
আরবের দুর্নীতিপ্রবণ ও জনবিরোধী শাসকদের বিরুদ্ধে যখন বসন্তের ঢেউ খেলে গিয়েছিল, সে সময় সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল ১০ বছর বয়সী এক শিশু। মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি শিশুদের মতো গুলতি কিংবা ছুরিতে সশস্ত্র হয়েও নয়, অন্যান্য কয়েকজনের সঙ্গে নিরস্ত্র অবস্থায় সাইকেল নিয়ে অহিংস প্রতিবাদে নেমেছিল মুর্তাজা কুইরিরিস। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সম্প্রতি তাদের এক বিশেষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে সক্ষম হয়, সুদীর্ঘ নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তার মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। সবশেষে শান্তিপূর্ণ সরকার বিরোধিতার শাস্তি হিসেবে ওই শিশুর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তাকে ‘বিচারিক হত্যা’র বলি বানানোর অপেক্ষায় রয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এই মৃত্যুদণ্ড ঠেকাতে তৎপর হয়েছে সংস্থাটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে গেছে সৌদি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিন্দা আর প্রতিবাদে।
আরবের সর্বব্যাপী স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা, প্রবল জনবিরোধিতা আর ভয়াবহ দুর্নীতিগ্রস্ত রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে শুরু হওয়া গণজাগরণকে পশ্চিমা সাংবাদিকরা নাম দিয়েছিলেন আরব বসন্ত (আরব স্প্রিং)। তিউনিসিয়ার এক শিক্ষিত মুদি দোকানি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন, সেই আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল মিশর, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, ইয়েমেন ও লিবিয়াসহ প্রায় সমগ্র আরব ভূখণ্ডে। এমনকী সৌদি আরবও বাদ যায়নি। ২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’র ঢেউ লেগেছিল সৌদি রাজতন্ত্রের জনবিরোধিতা ও তাদের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সেসময় দেশজুড়ে যে গণবিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল, তার অংশ হিসেবেই ১০ বছর বয়সী মুর্তাজা তার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সাইকেলে চড়ে প্রতিবাদে নেমেছিল। সে অপরাধেই পরবর্তীতে তাকে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। সৌদি আরবের দাবি, তারা রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়েছিল।
ইসরায়েলি রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভারী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গুলতি (ঢিল) আর ছুরি হাতে প্রায়শই নামতে দেখা যায় সেখানকার শিশু প্রতিবাদীদের। ওই শিশুদেরকে সন্ত্রাসী তমকা লাগিয়ে ‘বিচারিক সন্ত্রাস’ জারি রেখেছে সেখানকার জায়নবাদী সরকার। তবে ২০১১ সালে ১০ বছর বয়সে সৌদি শিশু মুর্তজা যখন প্রতিবাদে নেমেছিল, তখন তার হাতে কোনও গুলতি কিংবা ছুরি ছিল না। পায়ে একটি সাইকেল ছিল। সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এ প্রচারিত সামাজিক মাধ্যমের এক ভিডিওতে দেখা যায়. সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলের এক ধুলোমলিন রাস্তায় বাইসাইকেলে জড়ো হয়েছে একদল বালক। সাইকেলের পেডেলে পা রেখে প্রায় ৩০ বালকের ওই দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল ১০ বছর বয়সী মুর্তাজা কুরেইরিস। মনে হচ্ছিল কোনও প্রতিযোগিতা করার জন্য জড়ো হয়েছে বালকের দল। সৌদি আরবের দাবি, তারা সে সময় সরকারবিরোধী শ্লোগান দিচ্ছিলো। ঘটনার দায়ে মুর্তজাকে আটককেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল।
১০ বছর বয়সে আটক সৌদি কিশোর মুর্তাজা কুরেইসের মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণার বিপরীতে নিন্দায় ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। টুইটারে সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন তারকা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অ্যাকটিভিস্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। সৌদি আরবে মুর্তজাই সর্বকনিষ্ঠ রাজনৈতিক বন্দি। যু্ক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুলা জেব্রায়েল এক টুইটে বলেন, ‘১০ বছর বয়সে আটক শিশুকে এখন মৃত্যুদণ্ড দিতে চাইছে সৌদি আরব। দেশটির সর্বকনিষ্ঠ রাজনৈতিক বন্দি সে।’ মাহমুদ মুরসালিন নামে এক জন টুইট করেন, ‘কথিত অপরাধের সময় মুর্তাজার বয়স ছিলো মাত্র ১০ বছর। গ্রেফতারের সময় ছিলো ১৩ বছর। তাকে কীভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়? আমার প্রশ্ন ইসলাম কি এটা সমর্থন করে?’ এছড়া এই মৃত্যুদণ্ড বাতিলের দাবিতে অনলাইনে পিটিশন খুলেছেন অনেকে। চেঞ্জ ডট ওআরজিতে খোলা ওই পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন অনেকে। সেই লিংক টুইট করেও সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
Leave a Reply